Monday, July 8, 2019

কামরাঙ্গীরচরের গলি বয় রানা।

hasanblog:

গলি বয় রানা: যে গানে পাল্টে গেল কামরাঙ্গীর চরে বেড়ে ওঠা এই শিশুর জীবন

hasanblog







ঢাকার কামরাঙ্গীর চরে পথ শিশু হিসেবে বেড়ে ওঠা রানার একটি হিপ হপ গান ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা সকলের নজর কাড়ে। পরিচিত হয়ে ওঠে সে 'গলি বয় রানা' নামে।

এই আমি রানা

কামরাঙ্গীর চর পূর্ব রুসুল পুর আট নাম্বার গলি মনের কথা বলি ।

আমি গলির পোলা আমার নাম হইলো রানা

শহরের অলি গলির গল্প আমার জানা

জীবনের কঙ্কালটা কাছ থাইকা দেখি

কিছু কিছু প্রশ্ন আছে মনের মধ্যে রাখি

আমার অনেক ইচ্ছা ছিল ইস্কুলে যামু

তিনবেলা পেট ভইরা ভাত মাছ খামু

আমার লাইগা নতুন একটা কালা পেন্ট কিননা
 
নতুন একটা শাড়ি কিননা মার হাতে দিমু

এখন সেই ইচ্ছা দিছি মনের মধ্যে কবর

পেটে আমার খিদা তাহে তিন বেলা খামু

এক মাস সিহরি খাইয়া রোজা রাহা সোজা

আমি রানা হারা বছর না খাইয়া রোজা 

দেশবাসি হুইনা রাহেন একদিন আমার দিনও আইবো

গলির পোলার কন্ঠে একদিন হারা দেশ কাপবো

বর লোকের পোলা আমায় দেইখা কয়

ছিড়া প্যান পইরা ঘুরি আমি গলি বয় 

আস্তে আস্তে বল করমু পারলে মাইরো ছয়

আমি কামলা খাইটা যামু

তোমরা কইরো জয় 

এই গানে রানা তারা নিজের জীবন সংগ্রাম, স্বপ্ন এবং তার প্রতি সমাজের আচরণের কথা তুলে ধরে।

সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে খ্যাতি পাওয়ার পর বদলে গেছে রানার জীবন-যাপন।

বাসা-বাড়িতে রান্না করা রানার মা সিতারা বেগম কখনো কল্পনা করেননি ছেলেকে পড়াশুনা করাতে পারবেন। এখন তিনিও স্বপ্ন দেখছেন তার ছেলে রানা পড়াশুনা করতে পারবে, বড় হয়ে আর্মিতে যোগ দিবে।

গত কয়েকদিন যাবত স্যোশাল মিডিয়ায় রানা ওরফে রানা মৃধার (৮) হিপহপ টাইপের গানের ভিডিও ভাইরাল হয়ে পড়েছে। তার গানটি শিশু, কিশোর ও বয়স্কদের মনে নাড়া দিয়েছে। যদিও গানটি তাল মেলানো। কিন্তু, গানের প্রতিটি শব্দে তার একরাশ কষ্টের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আর একারণেই রানার হিপহপ গানটি অতিদ্রুত শ্রোতাদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, একটি কার্টুনে বসে রানা ও আরেকটি শিশু হিপহপ গানটি বেশ আনন্দ নিয়ে গাইছে।

জানা যায়, রানা মৃধা কামরাঙ্গীরচরের রসুলপুরের ৮ নং গলিতে মায়ের সাথে বসবাস করে। বাবা নেই। বাবার অভাবটা সবসময় রানাকে পীড়া দেয়। অভাবের তাড়নায় রানা শিশু বয়সে জীবিকার তাগিদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ফুল বিক্রি করে। ফুল বিক্রির টাকা মায়ের হাতে তুলে দেয় রানা। জানা যায়, রানার মা বাসাবাড়িতে বুয়া হিসেবে কাজ করেন। রানা ও তার মায়ের উপার্জিত টাকায় তাদের সংসার চলে। অভাবের সংসারের কারণে রানা স্কুলমুখী হতে পারেনি। ছোট্ট রানা হৃদয়ের জমানো কষ্ট থেকে এই হিপহপ গানটি পরিবেশন করে।

আরও জানা যায়, রানার শখ ছিল ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু, পড়ালেখা করতে না পারায় তার সেই স্বপ্ন অপূর্ণই হয়ে পড়েছে। তবে, সে হতাশ হয়নি। মনে আশা বেঁধে রেখেছে। রানা মৃধার মা সিতারা বেগম রানার গাওয়া হিপহপ গানটি দেখে অবাক হয়েছেন। তিনি বিশ্বাসই করতে পারছেননা। তার এতটুকুন ছেলে মোবাইলে গান গায়। অনেকেই রানার গানটি মোবাইলে তার মাকে দেখায়। এতে, রানার মা এখন বেশ খুশি। রানার গানে সমাজের অসঙ্গতি ও তাদের প্রতি চরম অবহেলার কথা প্রকাশ পেয়েছে।

রানার গানটি এমন— আমি গল্লির পোলা, আমার নাম হইলো রানা, অলিগলির গল্প আমার আছে জানা, জীবনের গল্প আস্তে আস্তে দেখি, কিছু কথা মনের মধ্যে রাখি, একমাস সেহরি খেয়ে রোজা রাখা সোজা, আমি রানা সেহরি না খেয়ে সারাবছর রোজা। রানা মৃধার হৃদয়স্পর্শী কথাগুলো নেটিজেনদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। রানা মৃধার গানটি আপলোড করে স্যোশাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদ তাবিব।

সচেতন মহলের মতে, আমাদের সমাজে এরকম হাজারো রানা মৃধা রয়েছে। তারা সমাজের সচ্ছল মানুষের কাছে অবহেলিত। একারণে, অধিকাংশ রানা মৃধাই বিপথগামী হয়ে যায়। তারা হয়ে উঠে একেক সময় একেকজন ভয়ংকর মানুষ। তাদের মতে, রানার মত সুবিধাবঞ্চিত, অবহেলিত শিশুদের প্রতি সচ্ছলদের হাত বাড়িয়ে দেয়া উচিত। তাহলে, গল্লি বয় রানারাই একসময় বড় গায়ক হবে। সমাজের প্রতি তাদের বিরূপ ধারণা দূর হবে।

সাথেই থাকুন হাসান ব্লগের। 

No comments: